সেন্টমার্টিন দ্বীপ
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সমুদ্রপ্রেমিদের কাছে এটি ব্যাপক পরিচিত একটি নাম। বিখ্যাত লেখক, কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দারুচিনি দ্বীপ নামের পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি দ্বারা এই দ্বীপটির পরিচিতি আরো বেড়ে যায়।
প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও (Narikel Jinjira) বলা হয়ে থাকে। প্রচলিত আছে অনেক অনেক বছর আগে প্রতিকুল আবহাওয়ার মধ্যে এখানে দারুচিনি বোঝাই আরবের একটি বাণিজ্যিক জাহাজ পানির নীচে থাকা একটি বিশাল পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ভেঙ্গে পড়ে, যার ফলে জাহাজে থাকা দারুচিনি এই দ্বীপের সবখানে ছড়িয়ে যায় এবং পরবর্তীতে সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপের নাম হয়ে যায় ‘দারুচিনির দ্বীপ’।
সেন্ট মার্টিনের আসল মজা একরাত না থাকলে উপভোগ করা সম্ভব নয়। আরো ভাল হয় দুইরাত থাকলে। সেক্ষেত্রে ১টা দিন ছেড়া দ্বীপের (Chera Dwip) জন্য, আরেকটা দিন সেন্টমার্টিনের জন্য বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। প্রতিদিনের পর্যটকরা বিকেলের মধ্যেই ফিরে যায়, তাই বিকেলের পর থেকে দ্বীপে ঘুরে বেরানোর মজাই আলাদা। আর যদি ভরা পূর্ণিমায় যেতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই, রাতের বেলা সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপে ঘুরে বাড়াবেন আর বাঁচার ইচ্ছেটা বাড়িয়ে নিবেন।
দ্বীপের কয়েক জায়গা বিশেষ করে পশ্চিম বীচ থেকে সাইকেল ভাড়া নেওয়া যায় ঘন্টা প্রতি ৩০-৪০টাকায়। বীচ ধরে ঘুরতে পারবেন মনের সাধ মিটিয়ে।
বিদ্যুৎ সুবিধাঃ সেন্ট মার্টিনে পিডিবি বা পল্লী-বিদ্যুত এর সংযোগ নাই। পুরোটাই জেনারেটর নির্ভর। রিসোর্ট-হোটেলগুলো সন্ধ্যা থেকে সাধারণত রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত জেনারেটর চালায়। দিনের বেলায় পানির পাম্প ছাড়ার জন্য কিছুটা সময় চালু রাখতে পারে। শীতকালে ফ্যান লাগে না বলে দিনে কারেন্টের অভাব টের পাওয়াও যায় না। সমস্যা হয় মোবাইল, ক্যামেরা, ল্যাপটপ এসব চার্জ করা নিয়ে । রাতের বেলা জেটি অর্থাৎ জাহাজ ঘাটে সারি সারি রেস্টুরেন্টের আলো-ঝলমলে পরিবেশে মনেই হয় না দ্বীপে কারেন্ট নাই। এরা অনেক রাত অবধি জেনারেটর চালু রাখে।
সেন্ট মার্টিন’স কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার থেকে বাসে করে টেকনাফ যাওয়া যাবে। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদে টেকনাফের বাস পাওয়া যায়। হানিফ, শ্যামলী, ইউনিক, এস আলম, ঈগল, গ্রীন লাইন ইত্যাদি বাস টেকনাফ যায়। ১০-১২ ঘণ্টা লাগে পৌঁছাতে। চট্টগ্রাম ও কক্স-বাজার থেকে নিয়মিত বাস পাওয়া যায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে। কক্সবাজার থেকে মাইক্রো বাস ভাড়া করেও টেকনাফ যাওয়া যায়।
টেকনাফের জাহাজ ঘাটে গিয়ে আপনাকে জাহাজের টিকেট কাটতে হবে। ভাড়া ৫০০-১০০০ টাকা (ফেরতসহ)। টেকনাফ হতে সেন্টমার্টিনের দুরত্ব ৯ কিমি। উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেতে হয় এখানে। শীত মৌসুমে সাগর শান্ত থাকে তাই এই সময় এখানে যাওয়া অনেক বেশি নিরাপদ। এই পর্যটন মৌসুমে এখানে টেকনাফ হতে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত গ্রীন লাইনের ওয়াটার বাস, এল সি টি কুতুবদিয়া, কাজল, এম ভি বাঙালি ও কেয়ারী সিন্দবাদ নামে কয়েকটি জাহাজ বা সী-ট্রাক চলাচল করে। সকাল সাড়ে নয়টায় এই নৌযানটি সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় এবং বিকাল তিনটায় ফিরে আসে।
এছাড়াও ট্রলার ও স্পীড বোটে করে যাওয়া যায় সেন্ট মার্টিন’স। সী ট্রাক গুলো এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলাচল করে। এর পর বৈরি আবহাওয়ার কারণে প্রশাসন একে চলতে দেয় না। তবে যারা বৈরি মৌসুমে এডভেঞ্চার হিসেবে যেতে চান সেন্টমার্টিন তারা ট্রলার ভাড়া করে যেতে পারেন। তবে এই যাত্রাটি খুব একটা নিরাপদ নয়। সাধারণত দুর্ঘটনা ঘটে না, তবে ঘটে যেতেই পারে। তাই সাবধান। কিন্তু উত্তাল সাগরের প্রকৃত রূপ দেখা কিংবা নির্জন দ্বীপে বসে বৃষ্টিস্নান করার লোভ যারা সামলাতে না পারেন তাদের জন্য ট্রলার ছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই, ৮০০ টাকায় ট্রলার ভাড়া করা যাবে অথবা প্রতি জন ১০০ টাকা করে ভাড়া দিয়েও যাওয়া যাবে।
খুঁটিনাটি তথ্য সমূহ:
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অপর নাম ? নারিকেল জিঞ্জিরা.
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অপর নাম কী? নারিকেল জিঞ্জিরা
সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন কত ? ৮বর্গ কি. মি.
বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ যে জেলায় অবস্থিত ? কক্সবাজার
অলিভ টারটল কোথায় পাওয়া যায় ? সেন্টমার্টিন দ্বীপে
সেন্টমার্টিন দ্বীপে কত প্রজাতির উভচর রয়েছে? ৪
সেন্টমার্টিন দ্বীপে কত প্রজাতির স্তন্যপায়ী রয়েছে? ১৯
সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোন খনিজ পদার্থ পাওয়া যায় ? চুনাপাথর
পেজালা নামে পরিচিত Sea weeds
বা অ্যালগি এক ধরণের সামুদ্রিক শৈবাল কোথায় প্রচুর পাওয়া যায়?
সেন্ট মার্টিন’স
সবুজ সাগর কাছিম এবং জলপাইরঙা সাগর কাছিম প্রজাতির ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে কোন জায়গাটি খ্যাত?
সেন্ট মার্টিন’স
পরী মাছ,লবস্টার, প্রজাপতি মাছ,বোল করাল,রাঙ্গা কই, সুঁই মাছ, লাল মাছ,উড়ুক্কু মাছ কোথায় পাওয়া পায় ?
সেন্টমার্টিন’স দ্বীপে
কেওড়া বন কোন দ্বীপে বেশি দেখা যায় ? সেন্টমার্টিন’স দ্বীপে
ভাটার সময় সেন্টমার্টিন থেকে কোন দ্বীপে হেটে যাওয়া যায় ? ছেড়াদিয়া বা সিরাদিয়া
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের স্থানের নাম কী ? ছেড়াদিয়া বা সিরাদিয়া
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের গড় উচ্চতা কত ? ৩.৬ মিটার
দারুচিনি পাওয়া যেতে কোন দ্বীপে ? সেন্টমার্টি ‘স দ্বীপে
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপের নাম কী ? সেন্টমার্টিন
সেন্টমার্টিন দ্বীপ যে নদীর মোহনায়? নাফ ( নাফ নদীর দৈর্ঘ্য ৫৬কি.মি ( প্রচলিত উত্তর) , ৬৩কি.মি ,বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে বিভক্তিকারী নদী এটি, মূলত এটি কোন নদী নয়, বঙ্গোপসাগরের বর্ধিত অংশ। এর পানি তাই লবনাক্ত। এই নদী জোয়ারভাটা প্রবণ ।
বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ড থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দূরত্ব কত ? ৯ কি.মি
সেন্টমার্টিন দ্বীপে কত প্রজাতির প্রবাল রয়েছে? ৬৬ প্রজাতির প্রবাল
আমাদের তথ্যসমূহ যদি কোন ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে, ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং নতুন কোন তথ্য যদি জানার থেকে থাকে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন, এছাড়া ও আপনারা ট্রাভেলার যারা নতুন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা, আপনাদের মতামত আমাদের কাছে শেয়ার করতে পারেন, আপনাদের কি তথ্যসমূহ বা ভিডিও আমাদের এই ওয়েবসাইট এবং হলিডে টুর ইউটিউব চ্যানেলে পাবলিশ করে থাকি|