পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় এবং সেরা ট্রেক হচ্ছে সান্দাকফু ট্রেক। কেনো হবেই না বলুন কারণ আর কোথা থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ৫ টা চূড়ার ৪ টি চূড়া একসাথে দেখতে পাবেন? দেখতে পারবেন হিমালয়ে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত বুদ্ধ কে?

সান্দাকফু ওয়েস্ট বেঙলের সবচেয়ে উঁচু পিক যার উচ্চতা ১১৯২৬ ফিট এবং অন্যতম টেবিল টপ এই রেঞ্জের চূড়া হলো ফালুট যার উচ্চতা ১১৮০০ ফিট।

যাওয়ার উপায়ঃ এজন্য আপনাকে দার্জিলিং হয়ে মানেভাঞ্জান নামক জায়গায় যেতে হবে।এখান থেকেই সান্দাকফু ট্রেক এর শুরু।

জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং বাই রোডে এসে এর পর শেয়ার কিংবা রিজার্ভ ক্যাব এ করে মানেভাঞ্জান চলে আসা যায়। মানেভাঞ্জান কিন্তু ভারত নেপাল বর্ডারে অবস্থিত। এখানে আন্তর্জাতিক সীমানা একটি ড্রেন। চাইলেই ভিসা ছাড়াই ঘুরে আসতে পারবেন নেপাল থেকে

ভাড়াঃ জলপাইগুড়ি টু দার্জিলিং ১৫০ রুপি আর এদিক দিয়ে ১৫০ রুপির মতো। যাই হোক ট্রেক ক্যাটাগরির হিসাবে এটি খুব বেশি কঠিন না।

ট্রেকিং এ নতুন রাও খুব সহজেই করতে পারবে যদি কিনা তার ৮-১০ কিলো হাটার মতো শক্তি থাকে। মানেভঞ্জন থেকে প্রথমে গাইড নিতে হবে গাইড ছাড়া যাওয়ার উপায় নেই যদিওবা মার্ক করা প্রতিটি পয়েন্ট, তবুও রুলস ইজ রুলস।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশনঃ

১. গাইড ছাড়া ট্রেক করা যাবে না।

২. এই ট্রেকে চলে যেতে হবে নেটওয়ার্ক এর বাইরে। হ্যা ইন্ডিয়ান সিমের নেটওয়ার্ক পাবেন না হল্ট করা প্লেস গুলো তে, কিছু জায়গায় ভাগ্য ভালো থাকলে পেতে পারেন।

৩. থাকার জন্য চাইলে ক্যাম্পিং করতে পারেন। ২/৩ জনের গ্রুপের ক্যাম্পিং পারমিশন নিতে ৪০০ রুপি পার ডে লাগবে।

৪.মিড জুন থেকে মিড সেপ্টেম্বর সিংগলিয়া পার্ক বন্ধ থাকে। এই সময় ট্রেকিং অফ থাকে এই রুটে।

ট্রেকিং এর শুরু

১ম দিনঃ মানেভঞ্জন থেকে Tonglu র পথে। টোটাল ১১ কিলো পথ। ৬-৭ ঘন্টা হাটলেই পৌছে যাওয়া যাবে Tonglu . এই রুটেই যেতে গেলে পড়বে meghma যেটা কিনা ইন্ডিয়া ও নেপালের বর্ডার। চাইলে নেপাল থেকেও আরেক চক্কর দিয়ে আসতে পারবেন

meghma থেকে রুট আলাদা হয়ে যায়। বামের রাস্তা টি নেপালের ভিতর দিয়ে tumling আর ডানের রাস্তা tonglu হয়ে tumling । ওই আরকি ঘুরে ফিরে বটের তল

Tonglu সিংগালিয়া রেঞ্জের অন্যতম উঁচু পর্বত। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। হিল টপে ফ্লাট জায়গায় রয়েছে GTA (Gorkhaland Territorial Administration, erstwhile DGHC-Darjeeling Gorkha Hill Council) এবং ট্রেকারদের জন্য হাট রয়েছে। এছাড়াও কিছু লজ ও একটি বাংলো রয়েছে ট্রেকারদের থাকার জন্য ।

tonglu থেকে ২ কিলো পথ আগালেই পড়বে tumling । আজকের দিনের হল্ট tumling নন ট্রেকার রা চাইলে গাইড ছাড়াই এই পর্যন্ত আসতে পারে। এর পরে Gairibas থেকে সিংগলিয়া ন্যাশনাল পার্ক এর শুরু।

সেখান থেকে পারমিশন এবং গাইড সহ বাকি পথ আগাতে হবে।

২য় দিনঃ Gairibas এর পথে। আজকের দিনের হল্ট kalpokhari. ৬/৭ ঘন্টার ট্রেক আজকে। গাইরিবাস থেকে কিছু আগালেই সিংগলিয়া ন্যাশনাল পার্ক। আব ক্লিয়ার করে পার্কে প্রবেশ করলেই দেখতে পারবেন নানা জানা অজানা উদ্ভিদ ও প্রাণী। ট্রেকে হাটার পথে চোখে পরবে ওকে পাইন সহ বিভিন্ন জাতের বাশ গাছে। কপাল ভালো থাকলে দেখা হয়ে যেতে পারে লাল পান্ডা, চিতা, হিমালয়ের কালো ভাল্লুক ও হিমালয়ের হরিণদের সাথে। এছাড়াও পুরো ট্রেকে শতাধিকের বেশি পাখির কলরব শুনতে পারবেন। ৬/৭ ঘন্টার ট্রেক শেষ এ পৌছে যাবেন kalpokhari.

কাল পোখারী নাম টা যে বড় কালো পানির লেকের জন্য হয়েছে তা না, লোকাল মানুষদের ভাষ্য মতে এই লেকের পানি কখনো ফ্রিজ হয় না এখানেও GTA এ ট্রেকার হাট এবং কিছু লজ আছে ট্রেকারদের থাকার জন্য।

৩য় দিনঃ আজকের ট্রেক টি এই পুরো ট্রেকের সবচেয়ে কঠিন পথ। ৬ কিলো পথে হলেও ১০ হাজার ফিট উঁচু তে উঠা কিন্তু চারটে খানিক কথা না! ২ কিলো পথ এগিয়ে গেলেই Bikheybhanjan যেখানে কিছু ছোট হাট রয়েছে। হালকা জিড়িয়ে বাকি ৪ কিলো পথ বাড়ালেই নিজে নিজে বলবেন ‘No great thing in life come easy’

আস্তে ধিরে বাকি পথ এগোতে থাকেন, ২ ঘন্টা পথ অতিক্রম করলেই মাইলস্টোন দেখতে পারবেন সান্দাকফু ০ কিলো। হ্যা আপনি পৌছে গেছেন। আর মাত্র ৪০০ মিটার উঠলেই আপনার কাংখিত সেই প্লেসে পৌছে যাবেন।

আজকের রাত টা এখানেই কারণ এত কষ্ট করে এতদূর এসে ভোরের সূর্যদয় তো দেখতেই হবে। থাকার বেশ কিছু লজ ও GTA হাট রয়েছে এখানে। সো সমস্যা নেই। আজকে এলার্ম সেট করে ঘুমিয়ে পড়ুন।

৪র্থ দিনঃ ভোর বেলা উঠে পড়ুন। সানরাইজ ভিউ পয়েন্ট শেরপা চ্যালেট থেকে ১০০ মিটার দূরে। আলো আস্তে আস্তে বাড়ার সাথে বামে থেকে ১৮০ ডিগ্রি সমতলে দেখতে পাবেন বিরাট বরফের দেয়াল, এটি Chamlang (24000 feet), তার একটু ডানে দেখতে পাবেন টাইটানিক অফ দা মাউন্টেইন ইন দা ওয়াল্ড, মাউন্ট এভারেস্ট। Lhotse এবং Makalu কাছাকাছি রয়েছে এভারেস্ট এর। ভিউ এর একদম মাঝামাঝি তে দেখা যাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা তার সিস্টার পিক দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

চাইলে Sabargram হয়ে একদিনে phalut ঘুরে আসা যায়। সান্দাকফু র মতো এত ওয়াইড ভিউ না পাওয়া গেলেও কাঞ্চনজঙ্ঘা কে আরো কাছ থেকে আরো সুন্দর ভাবে দেখা যায়।৫ম দিনঃ আজ ফেরার পালা। রুট Sandakphu-Srikhola. একদম সোজা পথ। ১৬ কিলোমিটার হাইকিং রুট।

এই রুটের রেস্ট পয়েন্ট Gurdum. ৬ষ্ঠ দিনঃ যাই হোক srikhola থেকে সকাল বেলা শেয়ার জিপ ছাড়ে দার্জিলিং এর পথে। দার্জিলিং থেকে জলপাইগুড়ি হয়ে আজ দেশের পথে।

যাই হোক এবার খরচের হিসাবে আসি

খাওয়ার খরচঃ প্রতিদিন ৫০০ রুপি খাওয়ার খরচ হবে। সান্দাকফু পর্যন্ত এমনই খরচ হবে। সো ৫*৫=২৫০০ রুপি।

গাইড খরচঃ ১০০০/১২০০ রুপি পার ডে ৭ জনের জন্য ( এর মধ্যে তার সব কিছু ) ৭ জনের বেশি হলে দিনে অতিরিক্ত ১৫০/৩০০ রুপি।

সো ৭ জনের হিসাব করলে ১২০০×৫= ৬০০০। জনপ্রতি এই ট্রিপে একজনের গাইডের জন্য খরচ হচ্ছে ১০০০ রুপি।

থাকার খরচঃ চাইলে ক্যাম্প করতে পারেন। ৩/৪ জনের ক্যাম্পিং এর পার ডে খরচ ৪০০ রুপি৷ সো একজনের ১০০ রুপি৷ প্রায় সব জায়গায় ক্যাম্প করার সাইট আছে। সো সমস্যা নেই৷

এক্ষেত্রে ৫ দিনে খরচ হচ্ছে ৫×১০০=৫০০ রুপি।

আর ডরমিটরি টাইপ রুমে থাকলে পার ডে গড়ে ৪০০ রুপি খরচ হবে একজনের৷

৫ দিনে থাকার খরচ হবে তাহলে ৫×৪০০=২০০০ রুপি।

টোটাল মানেভঞ্জন টু সান্দাকফু টু দার্জিলিং খরচ দাড়ালো ২৫০০+১০০০+২০০০=৫৫০০ রুপি ( ক্যাম্পিং করলে ৪০০০ রুপি )

আর যদি ফালুট ট্রেক করে আসতে চান তাহলে দুইদিনের খরচ অতিরিক্ত এড হবে।

১. থাকার খরচঃ ২০০ রুপি।

২. খাওয়ার খরচঃ১০০০ রুপি।

৩. গাইড খরচঃ ৫০০ রুপি।

টোটাল এড হবেঃ ২০০০ রুপি।

এখন বাংলাদেশ থেকে গেলেঃ

বাংলাদেশ থেকে দার্জিলিং যেতে নন এসি বাসে খরচ হয় ৯০০×২=১৮০০ টাকা ( আপ ডাউন )

সারাদিনের খাওয়ার খরচ ৩০০*২=৬০০ রুপি ( যেদিন বাংলাদেশ থেকে আসবো এবং যেইদিন যাবো )

এক রাত মানেভঞ্জনে থাকার খরচঃ ২৫০ রুপি। বাংলাদেশ থেকে টোটাল খরচ হচ্ছে ৬৩৫০ রুপি বা ৮০০০ টাকা/ ১০০০০ টাকা।

এইরকম আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের চ্যানেলটি 💡 সাবস্ক্রাইব করুন: https://www.youtube.com/c/AHoliDayTour/

এবং Facebook page Like দিয়ে https://www.facebook.com/Aholidaytour24 আপনাদের ব্যাক্তিগত মতামত জানাতে ভুলবেন নাকিন্তু…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here