সময়ের সাথে তালমিলিয়ে যুগের বিবর্তনে, একসময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ ছিল টাইটানিক। ১৯১২ সালে প্রথম সমুদ্রযাত্রায় বিলাসবহুল এই প্রমোদতরিটি হিমশৈলের সঙ্গে সংঘর্ষে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায়। ইতিহাসের এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় পনেরো শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এরপর অনেক দিন কেটে গেছে, টাইটানিকের চেয়ে বড় বড় জাহাজ নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু টাইটানিকের কথা আজও কেউ ভুলতে পারেনি। তবে এবার সাগরে আসছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরি ‘আইকন অব দ্য সিজ’। আকারে এটি টাইটানিকের চেয়ে দেড় গুণ বড়।
ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ডের ‘মায়ার তুর্কু’ নামক শিপইয়ার্ডে নির্মাণ করা হয়েছে ‘আইকন অব দ্য সিজ’। প্রমোদতরিটির মালিকানায় রয়েছে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল। আগামী অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে মালিকানা প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রমোদতরিটি হস্তান্তর করা হতে পারে।
জানা গেছে, ‘আইকন অব দ্য সিজ’ এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ২০০ ফুট। আনুমানিক ওজন ২ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টন। ওজন ধারণের ক্ষমতা বোঝাতে বলা যায়, প্রমোদতরিটি দুটি সিএন টাওয়ারকে ভাসিয়ে রাখতে পারবে। কানাডার টরন্টোয় অবস্থিত সিএন টাওয়ারের উচ্চতা প্রায় ১ হাজার ৮১৫ ফুট। বিশাল এই প্রমোদতরিতে প্রায় ৫ হাজার ৬১০ যাত্রী ও ২ হাজার ৩৫০ ক্রু থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। এতে থাকছে সমুদ্রে ভাসমান বিশ্বের বৃহত্তম ‘ওয়াটার পার্ক’। যার নাম রাখা হয়েছে ‘ক্যাটাগরি সিক্স’।
এই পার্কে রেকর্ডসংখ্যক ছয়টি ‘ওয়াটার স্লাইড’ যুক্ত থাকবে। সেই সঙ্গে থাকছে সাতটি পুল ও নয়টি ঘূর্ণিজলের ব্যবস্থা। প্রমোদতরিতে খাবারদাবার, পানীয় ও বিনোদনের ৪০টির বেশি উপায়-উপকরণ থাকছে। এতে ২০টি ডেক ও ৮টি সন্নিহিত এলাকা থাকছে। জাহাজটিতে নতুন জুটিদের জন্য যেমন বিশেষ স্থান থাকবে, তেমনি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য থাকবে আলাদা জায়গা। সবমিলিয়ে যেন এটি পুরো একটি শহর।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ক্যারিবীয় সাগরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে ‘আইকন অব দ্য সিজ’। ইতোমধ্যে গত ২২ জুন প্রমোদতরিটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো সাগরে চালানো হয়েছে। প্রথম পরীক্ষায় এটি কয়েক শ মাইল পথ পরিভ্রমণ করেছে। চলতি বছরের শেষ দিকে দ্বিতীয় ধাপে পরীক্ষা চালানো হতে পারে। গুঞ্জন রয়েছে, ইতোমধ্যে এই প্রমোদতরিতে ভ্রমণের রেকর্ডসংখ্যক অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। প্রমোদতরিটি সারাবছর যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি থেকে পূর্ব ও পশ্চিম ক্যারিবীয় অঞ্চলে চলাচল করবে।
রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট মাইকেল বেইলি বলেন, আমরা এই প্রমোদতরিকে পারিবারিক অবকাশের দারুণ একটি জায়গা হিসেবে তৈরি করেছি। এটি তৈরিতে যে কর্মশক্তি ও সময় ব্যয় হয়েছে, তা এককথায় অভূতপূর্ব বলা যায়।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরি ‘ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ’। এটিরও মালিক রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল। যার দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৮৮ ফুট। অর্থাৎ শিগগিরই সাগরে নামতে যাওয়া আইকন অব দ্য সিজের চেয়ে এটি কিছুটা ছোট।