করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে আগামী কিছুদিন কোথাও ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন ও সচেতন থাকুন। করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সকল তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন।

ভূ-স্বর্গ নামে পরিচিত কাশ্মীর। এর রূপে এমনই মুগ্ধ হয়েছিলেন মোঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরযে কাশ্মীরকে স্বর্গের সাথে তুলনা করেছেন। কাশ্মীরের রূপের কথা নতুন করে বলার কিছু নাই। ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে এমন সবারই মনে সুপ্ত বাসনা থাকে জীবনে একবার হলেও কাশ্মীর ঘুরে আসার। প্রতি বছরই দেশের অনেক ভ্রমণ পিপাসুরা এই স্বর্গরাজ্য কাশ্মীরে ছুটে যায় এর অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে।

কাশ্মীরের দর্শনীয় স্থান

কাশ্মীরের পুরো শহরটাই যেন স্বর্গ রাজ্য, দিগন্ত জোড়া উঁচু উঁচু পাহাড়ের মাঝে দেখা মিলে সাদা বরফের খেলা।রাজ্যের ভিতরে রয়েছে দেখার মতো নানা জায়গা। আর শহরের একটু বাইরে অপেক্ষা করছে আরেক সৌন্দর্য। তারপরও পর্যটকদের সুবিধার জন্য কিছু উল্লেখযোগ্য স্থানের নাম নিচে দেওয়া হলঃ

শ্রীনগর : শ্রীনগরে প্রথমেই চোখে পড়বে পাহাড়ের চূড়ায় বরফের মতো সাদা তুষার কনা। এখানে আছে মোঘল গার্ডেন, টিউলিপ গার্ডেন, হযরত বাল মসজিদ, ডাল লেক ও নাগিন লেক। গাড়ি ভাড়া করে সারাদিনের জন্য শ্রীনগর শহর টা দেখলে ভালো লাগবে। আরডাল লেকের ভাসমান শহরও ভালো লাগার মতো।

গুলমার্গ : শ্রীনগর থেকে মাত্র ৫২ কিলো দূরে সবুজ ঘাসে বিস্তৃত গুলমার্গ, যা সারা বছরই বরফে ঢাকা থাকে। এখানে দেখতে পারবেন গন্ডোলা, গলফ কোর্স, বাবা ঋষির মাজার, আফারওয়াত পিক, সেন্ট ম্যারি চার্চ। ক্যাবল কার ছাড়াও প্যারাগ্লাইডিং এর মজা পাবেন গুলমার্গে।

পেহেলগাম : শ্রীনগর থেকে ৯৭ কিলো দূরে ট্যাক্সি করে যেতে পারবেন পেহেলগামে। জুলাই থেকে অক্টোবরের মাঝে গেলে এখানে দেখা মিলবে রাস্তার দুধারের আপেল বাগান। আছে দেখার মতো অনেক কিছু। একটু সময় নিয়ে ঘুরলে ভালো ভাবে দেখতে পারবেন সবকিছু, যেমনঃ লিদার নদী, বেতাব ভ্যালি, চান্দেরওয়ারি, আরু ভ্যালি, ধাবিয়ান, কাশ্মীর ভ্যালী পয়েন্ট, কানিমার্গ। ঘোড়ায় বসে ঘুরে বেড়াবার মজা পাবেন পেগেলহাম ভিউ পয়েন্টে। এখানের মিনি সুইজারল্যান্ড হিসেবে পরিচিত বাইসারানে যেতে ভুলবেন না।

শ্রীনগর থেকে পেহেলগামের দূরত্ব বেশ ভালোই, মোটামুটি ২-২.৫ ঘন্টা লেগে যায়, পেহেলগামে ঘুরার অনেক জায়গা আছে সময় থাকলে ১রাত থাকবেন ভালো লাগবে। আমার সময় সল্পতার কারণে ডে ট্যুর দিয়েছিলাম। আমরা ৬জন ছিলাম, তাই ২৮০০রুপি দিয়ে একটা ইনোভা নিয়েছিলাম।

খুব সকালে যাত্রা শুরু করি মাঝপথে সকালের নাস্তাটা সেরে নেয়। পেহেলগামে পৌঁছার পর ঘোড়া ভাড়া করার সময় এলো ওরা সেখানে ঘোড়াকে পনি রাইড বলে। মোটামুটি পনি রাইডে ৩/৪ ঘন্টা ঘুরবো আমরা, অনেক তর্ক-বির্তক করে ১০০০ রুপি করে প্রতি ঘোড়া ঠিক করি। প্রতিটা ঘোড়ার সাথে ওদের একজন লোক থাকবে, ৩/৪ঘন্টা ঘোড়ায় চড়া যেমন তেমন কথা না, কারণ কিছুক্ষণ বসার পর আপনার পাছার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে, আর যারা একটু মোটা মানুষ তাদের কষ্ট হয়ে যায় আরকি।

কিন্তু লাইফে প্রথম পনি রাইড মজার ছিলো অনেক। পনি রাইডে করে আমরা কাশ্মীর ভ্যালী, ডাবইয়ান, ওয়াটারফল, কেনমার্গ, ডিনো ভ্যালী, পেহেলগাম ভ্যালী, বাইসারান ঘুরি। আসলে এক রাস্তায় যাওয়ার সময় সবগুলো স্পট পড়ে যায়। প্রতিটা স্পট ছবি তোলার জন্য বিখ্যাত। সবচেয়ে সুন্দর লেগেছে বাইসারান, যাওয়ার পথে বাজরাংগী ভাইজান মুভির স্যুটিং স্পটগুলো ও দেখা যায়, এমন কি মুন্নীদের সেই বাসা ও দেখা যায়।

ঘুরাঘুরি শেষে যখন ফিরার পালা তখন ওরা আমাদের কে সর্ট কার্ট রাস্তা দিয়ে নিয়ে আসে, পাহাড়ের খাড়া চূড়া থেকে ঘোড়াগুলো যখন নীচে নামতেছিলো মনে হয় এইতো বুঝি জীবনটা শেষ।

এরপর ফিরে আসার সময় বাজরাংগী ভাইজান মুভির শেষের দৃশ্যে আদনান সামির গানের স্যুটিং স্পট আইসমুকাম দরগাহতে ও ঘুরে আসি।

কাশ্মীরের লোকজন বাংলাদেশের লোকদের খুবই পছন্দ করে এবং বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়ার ক্রিকেট ম্যাচে তারা বাংলাদেশের সাপোর্টার।

কাশ্মীরের পরিস্থিতি এমন যে সেখানে কোন সময় কি হয় বলা যায় না, এখন সব ঠিক আবার হুট করে কালকে অবরোধ, কাশ্মীর গেলে হাতে ১/২দিন সময় বেশী নিবেন, আমিও একদিন অবরোধে ছিলাম, আর কাশ্মীরে প্রতি ১০জন নাগরিকের জন্য ১জন আর্মি মোতায়েন রয়েছে।

তবে স্বর্গের তুলনা কারো সাথে হয়না, কাশ্মীর বছরে ৩ ঋতুতে ৩টা রুপ ধারণ করে। এর সৌন্দর্য আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না, ছবি আর বর্ণনা দিয়ে আসলো মনের ফিলিংসটা প্রকাশ করা যায় না যদিও।

আর খরছের ব্যাপারে আসলে এটা মানুষের উপর নির্ভর করে, আপনার থাকা,খাওয়া,ঘুরাঘুরি সবকিছুর উপর নির্ভর করে, তবে গ্রুপে ৫/৬জন গেলে সুবিধা কারণ গাড়ি ভাড়া করলে সেগুলো ৬সিটের থাকে। আর খাবারের দাম ও ১জনের টাকায় ২জন খাওয়ায় যায় আসলে। আর কাশ্মীর যাওয়ার জন্য বাই এয়ারে গেলে কলকাতা থেকে শ্রীনগর যাওয়া যায়, আর খরছ কমের জন্য চাইলে কলকাতা থেকে ট্রেনে জুম্মু হয়ে বাসে করে শ্রীনগর যেতে পারবেন।

ভূল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ এতটুকুই।
জীবন একটাই তাই যত পারবেন মেমোরি তৈরীর চেষ্টা করবেন, আর মন খারাপ থাকলে এই জীবনে কই কই গেলেন পুরাতন স্মৃতিগুলো দেখেবেন ভালো লাগবে অনেক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here