জি সম্প্রতি দেশব্যাপী জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা এই লোকেশনগুলো। সোশালমিডিয়ায় ছড়িয়ে যাওয়া ছবি দেখে অনেকেরই আর তর সইছে না যেন।
তবে বিশ্বাস করুন.. জায়গাটা ছবির মতো সুন্দর নয়। বরং তার চেয়ে কয়েকশগুণ বেশী সুন্দর।
চামড়াবন্দর এবং বালিখলা ফেরীঘাটের মোড় পার হয়ে ফেরীঘাটের রোডে এ ঢুকতেই কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ শুরু হয়ে যাবে হাওর অঞ্চল। চারদিকে পানি। যখন নোকায় "ধনু" নদী পার হবেন তখন নৌকায় স্রোত ভালোই ধাক্কা দেয়। ধনু গিয়ে মেঘনায় মিশেছে একপর্যায়ে.. ধাক্কা তো একটু দিবেই। তাই না?
একঘন্টা স্রোতের তালে দুলতে দুলতে পৌছে যাবেন মিঠামইন ঘাটে। পানি নিবেন সাথে.. বুকফাটা তৃষ্ণা পায়।মিঠামইন থেকে উপজেলার ভেতর টুকটাক পার হয়ে একটা মোড়ে আসবেন যেখানে লেখা বামে ইটনা, ডানে অষ্টগ্রাম। যেকোন দিকে যান। পরে ফিরে এসে অন্যদিকে। আমি গেলাম অষ্টগ্রামের দিকে.. যেই না মাত্র মোড় ঘুরেছি.. সারা বাংলার শ্রেষ্ঠ রাস্তা আমার চোখের সামনে যতদূর আমার চোখ যায়। মেঘলা আকাশ, দুইদিকে অসীম পানি আর এক সোজা রোড। 100-120 এ বাইকের গতি রেখে যখন যাচ্ছি মনে হলো আমি বাতাসের মাঝে কোন এক অজানায় হারিয়ে যাচ্ছি। আর এই হারিয়ে যাওয়াতে আমার কোন আপত্তি নেই, আফসোস নেই। এই যেন স্বাধীনতার স্বাদ। এই তো জীবনের অর্থ। চিরকালের পাখি হবার আফসোসটা সেখানেই মিটে যায়। কারণ আপনি পাখি হয়েছেন। বরং পাখির চেয়েও বেশী স্বাধীন আর মুক্ত। আপনি পেরেছেন এখানে উড়ে আসতে, সব বাধা পার হয়ে। আপনি সব পারবেন
কীভাবে যাবেনঃ
ঢাকা বা ময়মনসিংহ থেকে আগে কিশোরগঞ্জ যাবেন। ময়মনসিংহ - কিশোরগঞ্জ ৬৬-৬৮ কিমি। কিশোরগঞ্জ থেকে আপনারা করিমগঞ্জ-চামড়াবন্দর রোডে গিয়ে (বাসষ্ট্যান্ড থেকে এক সোজা রোড) পৌছাবেন বালিখলা ফেরীঘাটে।
বালিখলা ফেরিঘাট কিশোরগঞ্জ সদর থেকে ২১-২৩ কিমি দুরত্বে অবস্থিত।
[মিঠামইন চামড়াবন্দরে পৌছে সেখান থেকেই যাওয়া যাবে নৌকা যোগে। তবে আমরা বালিখলা ফেরীঘাট হয়েই গিয়েছি]
বালিখলা ফেরীঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করে হাওরের মাঝে একঘন্টা চলার পর আপনারা পৌছে যাবেন মিঠামইন ঘাটে।
((সড়ক ও জনপথের বড় ফেরীও পেতে পারেন সময়ের মধ্যে গেলে))
মিঠামইন ঘাটে নামার পর অফিসিয়ালি আপনার লোকেশন এখান থেকেই শুরু হলো।
ঘাটে নামার পর বাইক ভাড়া পাওয়া যেতে পারে কিছু পরিমাণ, আর আছে অটোবাইক। দরদাম করে উঠে পড়ুন। এবার নয়নাভিরাম সাবমারসিবল রোডে যেতে পারবেন ইটনা এবং অষ্টগ্রাম। দুই দিকে যতদূর চোখ যায় পান্না সবুজ রং এর পানি, মাঝে মাঝে দুই একটি ছোট্ট ঘর পানিতে মাথা উচু করে আছে। আর এক সোজা যতদূর আপনার চোখ দেখতে পায় ততদূর এক সোজা রোড। রাস্তা আপনার বাসার মেঝের থেকেও পরিষ্কার এবং মসৃণ
বাংলার বুকে এমন রাস্তা আরোও আছে হয়তো কিন্তু আমি দেখি নাই।
খরচের আইডিয়াঃ
ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জের বাস ভাড়া ১০০ টাকা, ঢাকা থেকে ১৫০ টাকা। বালিখলা থেকে নৌকা ভাড়া সারাদিনের জন্য - ছোট নৌকা ১০০০ টাকার মাঝে। বড় নৌকা ১৫০০ টাকা সর্বোচ্চ। সরকারী ফেরী অথবা লাইনের ট্রলার পেলে ভাড়া আরোও কম। ময়মনসিংহ থেকে পুরো ট্যুর শেষ করে আবার ময়মনসিংহ ফেরত আসতে বাইকে তেল লাগে ৫ টা (বড় বাইক) / ৩.৫-৪ টা (ছোটবাইক)।
ময়মনসিংহ থেকে পুরো ট্যুর কভারেজ ২৪০ কিমি।
ঢাকা থেকে ৩৫০ কিমি টোটাল।
পরামর্শঃ
১। মূলত এই ট্যুর বাইকের ট্যুর। বাইক নৌকা/ফেরী দিয়ে পাড় করা যায়।
২। বাইক না থাকলে মিঠামইন ঘাট থেকে ভাড়া নিতে পারবেন তবে সবসময়ই পাওয়া যায় না।
৩। বাইক না পেলে তবেই অটোবাইক ভাড়া নিন।
৪। রাস্তা, পরিবেশ অত্যন্ত পরিষ্কার। দয়াকরে সেখানে গিয়ে নোংরা করে, আবর্জনা ফেলে আপনার বংশের পরিচয় দিবেন না। প্রতিজ্ঞা করে যাবেন যে একটা ১ টাকার ক্যান্ডি চকলেটের খোসাও ফেলবেন না! সুন্দরকে সুন্দর থাকতে দিন। আমরা তো আবার জাতি হিসাবে খুব কিউট
৫। একসোজা খালি রাস্তা পেয়ে বাইক স্পিডের বিশ্বরেকর্ড করতে যাবেন না। আমি যেদিন গেছি সেদিনই একজনের পা গেছে.. হয়তো চিরতরেই
৬। মিঠামইন তো নামবেনই.. বামে ইটনা আর ডানে অষ্টগ্রাম দুটোই দেখবেন মিস দিবেন না।
৭। পানি কম থাকলে অষ্টগ্রাম থেকে বাজিতপুর আর ইটনা থেকে নিকলি যাওয়া যায়।
৮। সর্বোপরী শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। সাবধানে থাকবেন। আর দয়াকরে পরিষ্কার রাখবেন।
৯। মহামারী সময়ে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়তেই পাড়েন।
যাত্রা শুভ হোক। সকল মুসাফিরদের [traveller] জন্য দোয়া ও ভালোবাসা রইল।
ধন্যবাদ।
[/pl_text]
[/pl_col]
[/pl_row]